ছবি ও মূর্তি عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ سَمِعْتٌ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ: إِنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَذَاباً عِنْدَ اللهِ الْمُصَوِّرُوْنَ، متفق عليه- ১. অনুবাদ: আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রাযিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহে ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকটে সর্বাধিক আযাব প্রাপ্ত লোক হবে ছবি প্রস্ত্ততকারীগণ।[1] ২. ব্যাখ্যাঃ হাদীছে تَصَاوِيْرُ، تَمَاثِيْلُ، تَصَالِيْبُ তিনটি বহুবচনের শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। যেগুলির একবচনের অর্থ হ’লঃ যথাক্রমে ছবি, মূর্তি ও ক্রুশযুক্ত ছবি। তবে ‘ছবি’ বলতে সবগুলিকেই বুঝায়। ‘মূর্তি’ বলতে মাটি, পাথর বা অন্য কিছু দিয়ে তৈরী মূর্তি, প্রতিকৃতি, তৈলচিত্র ও কাপড়ে বুনা চিত্র কিংবা নকশাকে বুঝায়। হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, সাধারণ ছবির চাইতে ক্রুশযুক্ত ছবি অধিকতর নিষিদ্ধ। কেননা ক্রুশ ঐসকল বস্ত্তর অন্তর্ভুক্ত, যাকে পূজা করা হয় আল্লাহকে বাদ দিয়ে। পক্ষান্তরে সকল ছবি পূজা করা হয় না।[2] তিনি বলেন, যেসব বস্ত্ত পূজিত হয়, সে সবের ছবি প্রস্ত্ততকারীগণ ক্বিয়ামতের দিন সর্বাধিক আযাব প্রাপ্ত হবে। এগুলি ব্যতীত অন্যগুলির ছবি প্রস্ত্ততকারীও গোনাহগার হবে। তবে তাদের শাস্তি তুলনামূলকভাবে কম হবে। কুরতুবী বলেন, জাহেলী আরবের লোকেরা সবকিছুর মূর্তি তৈরী করত। এমনকি তাদের কেউ কেউ মূল্যবান ‘আজওয়া’ খেজুর দিয়ে মূর্তি বানাতো। তারপর ক্ষুধার্ত হ’লে তা খেয়ে নিত’।[3] এ যুগে যারা বিভিন্ন প্রাণী ও ফল-ফুলের আকারে কেক বা মিষ্টান্ন তৈরী করে ভক্ষণ করেন, তারা উক্ত জাহেলী রীতির বিষয়টি অনুধাবন করুন। অমনিভাবে যারা খৃষ্টানদের পূজ্য ক্রুশ-এর অনুকরণে গলায় টাই ঝুলাতে ভালবাসেন, আশূরার দিন হোসায়েন (রাঃ)-এর নামে কেক-পাউরুটি বানিয়ে তাকে বরকত মনে করে ভক্ষণ করেন কিংবা খৃষ্টানদের অনুকরণে কেক কেটে নিজেদের জন্মদিন ও বিভিন্ন শুভ কাজের উদ্বোধন করেন, তারাও বিষয়টি ভেবে দেখবেন। ছাহেবে মিরক্বাত মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (রহঃ) বলেন যে, হাদীছে ছবি অংকন বলতে প্রাণীর ছবির কথা বলা হয়েছে যা আল্লাহর সৃষ্টির সাথে সামঞ্জস্যশীল এবং যা দেওয়ালে বা পর্দার কাপড়ে থাকে।[4] তিনি বলেন, আমাদের (হানাফী) মাযহাবের বিদ্বানগণ ছাড়াও অন্যান্য বিদ্বানগণ বলেন যে, প্রাণীর ছবি অংকন করা কঠিনতম হারাম ও কবীরা গোনাহের অন্তর্ভুক্ত। চাই সেটা কাপড়ে হৌক, বিছানায় হৌক, টাকা-পয়সা বা অন্য কিছুতে হৌক। তবে যদি তা বালিশে, বিছানায় বা অনুরূপ হীনকর কোন বস্ত্ততে হয়, তবে তা হারাম নয় এবং ঐ অবস্থায় ঐ ঘরে ফেরেশতা আসতে বাধা নেই। অনুরূপভাবে শিকারী কুকুর, ফসল ও বাড়ী পাহারাদার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর ব্যতীত অন্য কুকুর থাকলে সে বাড়ীতে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। যারা ঐ বাড়ীর উপরে আল্লাহর রহমত বর্ষণ করে এবং বাড়ীওয়ালার জন্য আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করে। অবশ্য এরা ঐসকল ফেরেশতা নয়, যারা সর্বাবস্থায় বান্দার সাথে থাকে তার হেফাযতকারী হিসাবে’।[5] ছাহেবে মিরক্বাত বলেন, ছবি-মূর্তি ওয়ালা ঘরে কেবল ফেরেশতাই প্রবেশ করে না। বরং নবীগণ ও তাঁদের সনিষ্ট অনুসারী আল্লাহর নেক বান্দাগণও প্রবেশ করেন না।[6] ইমাম খাত্ত্বাবী বলেন, প্রাণীর হৌক বা বস্ত্তর হৌক, ছবি অংকন বিষয়টিই মকরূহ বা শরী‘আতে অপসন্দনীয় বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত। কেননা এগুলি মানুষকে অনর্থক কাজে ব্যস্ত রাখে। উপরন্তু ছবি-মূর্তির শাস্তি কঠিন হওয়ার প্রধানতম কারণ হ’ল এই যে, এতে আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যের উপাসনা করা হয়’। মোল্লা আলী ক্বারী বলেন,... আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যকে উপাসনা করার বিষয়টি যদি প্রাণী ছাড়াও সূর্য-চন্দ্র বা অন্য কোন জড় বস্ত্ত হয়, তাহ’লে সেই সব ছবি-মূর্তিও হারাম হবে’।[7] উল্লেখ্য যে, আমাদের আলোচনায় ছবি ও মূর্তিকে একই শিরোনামে বর্ণনা করার কারণ এই যে, দু’টির হুকুম একই এবং দু’টির ব্যবহারিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া একই। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে মূর্তির চাইতে ছবি, চিত্র, তৈলচিত্র, ছায়াচিত্র ও চলচ্চিত্রের প্রতিক্রিয়া আরও বেশী মারাত্মক হয়। সম্প্রতি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপযেলার বাড়াইশ গ্রামের জনৈকা ৭ মাসের অন্তঃসত্তা গৃহবধু বাংলাদেশ টেলিভিশনে পরিবেশিত একটি প্রেমমূলক নাটক দেখার পরদিনই ব্যর্থ প্রেমিকার অনুকরণে নিজের দেহে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যা করেছে বলে পত্রিকায় খবর বের হয়েছে।[8] পিতা ও মাতা উভয়ে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় একমাত্র পুত্রকে ঘরে রেখে যান টিভি চালু করে দিয়ে। ফিরে এসে ডাকাডাকি করেও ছেলের সাড়া না পাওয়ায় অবশেষে দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে দেখা গেল কিশোর ছেলেটির লাশ মায়ের ওড়না গলায় পেঁচিয়ে ফ্যানের নীচে ঝুলছে। সামনে টিভিতে তখন ভারতীয় ছবি চলছে। সেখানে দেখানো ফাঁসির দৃশ্যে অভিনয় করতে গিয়ে পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান হারিয়ে গেল চিরদিনের মত। ঢাকা মহানগরীর এই ঘটনাটি ২০০৮ সালের। ছবির নীল দংশনে এরূপ http://firuzforazi.wordpress.com
ছবি ও মুর্তি
ছবি ও মূর্তি عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ سَمِعْتٌ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ: إِنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَذَاباً عِنْدَ اللهِ الْمُصَوِّرُوْنَ، متفق عليه- ১. অনুবাদ: আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রাযিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহে ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকটে সর্বাধিক আযাব প্রাপ্ত লোক হবে ছবি প্রস্ত্ততকারীগণ।[1] ২. ব্যাখ্যাঃ হাদীছে تَصَاوِيْرُ، تَمَاثِيْلُ، تَصَالِيْبُ তিনটি বহুবচনের শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। যেগুলির একবচনের অর্থ হ’লঃ যথাক্রমে ছবি, মূর্তি ও ক্রুশযুক্ত ছবি। তবে ‘ছবি’ বলতে সবগুলিকেই বুঝায়। ‘মূর্তি’ বলতে মাটি, পাথর বা অন্য কিছু দিয়ে তৈরী মূর্তি, প্রতিকৃতি, তৈলচিত্র ও কাপড়ে বুনা চিত্র কিংবা নকশাকে বুঝায়। হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, সাধারণ ছবির চাইতে ক্রুশযুক্ত ছবি অধিকতর নিষিদ্ধ। কেননা ক্রুশ ঐসকল বস্ত্তর অন্তর্ভুক্ত, যাকে পূজা করা হয় আল্লাহকে বাদ দিয়ে। পক্ষান্তরে সকল ছবি পূজা করা হয় না।[2] তিনি বলেন, যেসব বস্ত্ত পূজিত হয়, সে সবের ছবি প্রস্ত্ততকারীগণ ক্বিয়ামতের দিন সর্বাধিক আযাব প্রাপ্ত হবে। এগুলি ব্যতীত অন্যগুলির ছবি প্রস্ত্ততকারীও গোনাহগার হবে। তবে তাদের শাস্তি তুলনামূলকভাবে কম হবে। কুরতুবী বলেন, জাহেলী আরবের লোকেরা সবকিছুর মূর্তি তৈরী করত। এমনকি তাদের কেউ কেউ মূল্যবান ‘আজওয়া’ খেজুর দিয়ে মূর্তি বানাতো। তারপর ক্ষুধার্ত হ’লে তা খেয়ে নিত’।[3] এ যুগে যারা বিভিন্ন প্রাণী ও ফল-ফুলের আকারে কেক বা মিষ্টান্ন তৈরী করে ভক্ষণ করেন, তারা উক্ত জাহেলী রীতির বিষয়টি অনুধাবন করুন। অমনিভাবে যারা খৃষ্টানদের পূজ্য ক্রুশ-এর অনুকরণে গলায় টাই ঝুলাতে ভালবাসেন, আশূরার দিন হোসায়েন (রাঃ)-এর নামে কেক-পাউরুটি বানিয়ে তাকে বরকত মনে করে ভক্ষণ করেন কিংবা খৃষ্টানদের অনুকরণে কেক কেটে নিজেদের জন্মদিন ও বিভিন্ন শুভ কাজের উদ্বোধন করেন, তারাও বিষয়টি ভেবে দেখবেন। ছাহেবে মিরক্বাত মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (রহঃ) বলেন যে, হাদীছে ছবি অংকন বলতে প্রাণীর ছবির কথা বলা হয়েছে যা আল্লাহর সৃষ্টির সাথে সামঞ্জস্যশীল এবং যা দেওয়ালে বা পর্দার কাপড়ে থাকে।[4] তিনি বলেন, আমাদের (হানাফী) মাযহাবের বিদ্বানগণ ছাড়াও অন্যান্য বিদ্বানগণ বলেন যে, প্রাণীর ছবি অংকন করা কঠিনতম হারাম ও কবীরা গোনাহের অন্তর্ভুক্ত। চাই সেটা কাপড়ে হৌক, বিছানায় হৌক, টাকা-পয়সা বা অন্য কিছুতে হৌক। তবে যদি তা বালিশে, বিছানায় বা অনুরূপ হীনকর কোন বস্ত্ততে হয়, তবে তা হারাম নয় এবং ঐ অবস্থায় ঐ ঘরে ফেরেশতা আসতে বাধা নেই। অনুরূপভাবে শিকারী কুকুর, ফসল ও বাড়ী পাহারাদার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর ব্যতীত অন্য কুকুর থাকলে সে বাড়ীতে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। যারা ঐ বাড়ীর উপরে আল্লাহর রহমত বর্ষণ করে এবং বাড়ীওয়ালার জন্য আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করে। অবশ্য এরা ঐসকল ফেরেশতা নয়, যারা সর্বাবস্থায় বান্দার সাথে থাকে তার হেফাযতকারী হিসাবে’।[5] ছাহেবে মিরক্বাত বলেন, ছবি-মূর্তি ওয়ালা ঘরে কেবল ফেরেশতাই প্রবেশ করে না। বরং নবীগণ ও তাঁদের সনিষ্ট অনুসারী আল্লাহর নেক বান্দাগণও প্রবেশ করেন না।[6] ইমাম খাত্ত্বাবী বলেন, প্রাণীর হৌক বা বস্ত্তর হৌক, ছবি অংকন বিষয়টিই মকরূহ বা শরী‘আতে অপসন্দনীয় বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত। কেননা এগুলি মানুষকে অনর্থক কাজে ব্যস্ত রাখে। উপরন্তু ছবি-মূর্তির শাস্তি কঠিন হওয়ার প্রধানতম কারণ হ’ল এই যে, এতে আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যের উপাসনা করা হয়’। মোল্লা আলী ক্বারী বলেন,... আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যকে উপাসনা করার বিষয়টি যদি প্রাণী ছাড়াও সূর্য-চন্দ্র বা অন্য কোন জড় বস্ত্ত হয়, তাহ’লে সেই সব ছবি-মূর্তিও হারাম হবে’।[7] উল্লেখ্য যে, আমাদের আলোচনায় ছবি ও মূর্তিকে একই শিরোনামে বর্ণনা করার কারণ এই যে, দু’টির হুকুম একই এবং দু’টির ব্যবহারিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া একই। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে মূর্তির চাইতে ছবি, চিত্র, তৈলচিত্র, ছায়াচিত্র ও চলচ্চিত্রের প্রতিক্রিয়া আরও বেশী মারাত্মক হয়। সম্প্রতি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপযেলার বাড়াইশ গ্রামের জনৈকা ৭ মাসের অন্তঃসত্তা গৃহবধু বাংলাদেশ টেলিভিশনে পরিবেশিত একটি প্রেমমূলক নাটক দেখার পরদিনই ব্যর্থ প্রেমিকার অনুকরণে নিজের দেহে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যা করেছে বলে পত্রিকায় খবর বের হয়েছে।[8] পিতা ও মাতা উভয়ে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় একমাত্র পুত্রকে ঘরে রেখে যান টিভি চালু করে দিয়ে। ফিরে এসে ডাকাডাকি করেও ছেলের সাড়া না পাওয়ায় অবশেষে দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে দেখা গেল কিশোর ছেলেটির লাশ মায়ের ওড়না গলায় পেঁচিয়ে ফ্যানের নীচে ঝুলছে। সামনে টিভিতে তখন ভারতীয় ছবি চলছে। সেখানে দেখানো ফাঁসির দৃশ্যে অভিনয় করতে গিয়ে পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান হারিয়ে গেল চিরদিনের মত। ঢাকা মহানগরীর এই ঘটনাটি ২০০৮ সালের। ছবির নীল দংশনে এরূপ http://firuzforazi.wordpress.com
Post a Comment
0 comments
প্রিয় পাঠক পোস্টটি পড়ার পর যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে দয়া করে গঠনমূলক মন্তব্য করুন । আপনার ছোট্ট একটি মন্তব্য আমাকে আরও ভালো এবং উন্নত মানের পোস্ট লিখতে উৎসাহ প্রদান-করবে। আর প্রাসঙ্গিক যেকোনো প্রশ্ন-সাহায্য-জিজ্ঞাসা-অভিযোগ থাকলে। মেইল করুন mrlutfor1@gmail.com এই ঠিকানায়। আপনার ছোট্ট একটি মন্তব্য আমার নিকট অধিক মূল্যবান। আসা-করছি সাথেই থাকবেন। ধন্যবাদান্তে -লুৎফর রহমান।