بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله وحده والصلاة والسلام على من لا نبي بعده وعلى آله وصحبه ومن تبعهم بإحسان إلي يوم الدين وبعد :
জীবন দর্শন[1]
হে মানুষ! একবার ভেবে দেখ তোমার এ জীবনটা কার দেওয়া? কিভাবে তুমি দুনিয়ায় এসেছ? অথচ ইতিপূর্বে তুমি উল্লেখযোগ্য কিছুই ছিলে না। তোমার মায়ের গর্ভে একটি পানিবিন্দু থেকে তোমার জন্ম। কে তোমাকে সেখানে মানুষের রূপ দান করল? কে তোমাকে সুন্দর অবয়ব ও উন্নত রুচি ও চিন্তাশক্তি দিয়ে দুনিয়ায় পাঠালো? কে তোমার ঐ ছোট্ট জড় দেহে আত্মার সঞ্চার করল? আবার কে ঐ আত্মাকে তোমার দেহ থেকে বের করে নিয়ে যাবে? দুনিয়ার সকল শক্তি দিয়েও কি তুমি তোমার আত্মাকে তোমার দেহ পিঞ্জরে আটকে রাখতে পারবে? ঐ রূহ যার হুকুমে এসেছে ও যার হুকুমে চলে যাবে তিনিই তো আল্লাহ। যার কোন শরীক নেই। তিনি তোমাকে সৃষ্টি করে তোমাকে অসহায়ভাবে দুনিয়ায় ছেড়ে দেননি। তিনি তোমার জীবনের পথের বিধান সমূহ পাঠিয়ে দিয়েছেন তাঁর নবী ও রাসূলগণের মাধ্যমে। যাদের সর্বশেষ হলেন আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম। হে অবিশ্বাসী মানুষ! সবকিছুকে তুমি অবিশ্বাস করলেও নিজের সৃষ্টিকে ও নিজের আত্মাকে তুমি কি অবিশ্বাস করতে পারবে? দেহ থেকে রূহটা চলে গেলে তুমি তো পোকার খোরাক হবে। কখনো কি ভেবে দেখেছ তোমার চোখের দৃষ্টিশক্তি কে দিল? অথচ তোমার পাশেই রয়েছে অসংখ্য দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। তোমাকে শ্রবণশক্তি কে দিল? অথচ তোমার পাশেই রয়েছে বহু শ্রবণ প্রতিবন্ধী। তোমাকে সুঠাম ও সুন্দর দেহ কে দিল? অথচ তোমার পাশেই রয়েছে অসংখ্য পঙ্গু, দুর্বল ও অসহায় মানুষ। তোমার সামনে রূযীর দুয়ার খুলে যাচ্ছে। অথচ তোমার বন্ধু শত চেষ্টায়ও তার অভাব মেটাতে পারছে না। অতএব তোমাকে স্বীকার করতেই হবে যে, সবকিছুর নিয়ামক একজন আছেন। যিনি অদৃশ্যে থেকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাঁর নির্দেশনার বাইরে যাবার ক্ষমতা তোমার নেই। যেমন পৃথিবী ও আকাশের সীমানা ছেড়ে বেরিয়ে যাবার ক্ষমতা তোমার নেই। রোগ-শোক, বার্ধক্য-জ্বরা কিছুই ঠেকাবার ক্ষমতা তোমার নেই। তুমি দু’হাত ছুঁড়ে বক্তৃতা করবে তোমার কল্পিত শত্রুর বিরুদ্ধে। আবার বাকরুদ্ধ হয়ে বিছানায় অবশ পড়ে থাকবে কিংবা বাক্য শেষ হবার আগেই তুমি মারা যাবে তাঁরই হুকুমে। সবই তোমার চোখের সামনে ঘটছে হর দিন। অথচ তোমার হুঁশ হয় না কোন দিন।
হে নাস্তিক! তুমি অবিশ্বাসের অন্ধগলি থেকে বেরিয়ে এসো। তোমার সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাসী হও। তাঁর প্রেরিত বিধান সমূহ মেনে চল। অনুতপ্ত হয়ে একান্তে নিভৃতে চোখের পানি ফেলে তাঁর নিকটে ক্ষমা চাও। তিনি তোমাকে ক্ষমা করবেন। বিশ্বাস কর, যে আল্লাহর হুকুমে তুমি দনিয়াতে এসেছ, সেই আল্লাহর কাছেই তোমাকে ফিরে যেতে হবে। মনে রেখ ঈমান ও ইসলাম ব্যতীত এ পৃথিবীতে কোন মানুষ শান্তি ও স্বস্তি লাভ করতে পারে না। আল্লাহ তোমাকে খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করেননি। এ পৃথিবীকে তাঁর প্রেরিত বিধান মতে সুন্দরভাবে আবাদ করার জন্যই তিনি তোমাকে বুদ্ধিমান মানুষ হিসাবে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। আখেরাতে তোমাকে এ জীবনের পূর্ণ হিসাব দিতে হবে। অতএব তাঁর জৈবিক বিধানকে যখন তুমি অস্বীকার করতে পারছ না, তখন তুমি তাঁর নৈতিক ও সামাজিক বিধানকে কেন অস্বীকার করছ? আর সেকারণেই তো পৃথিবী আজ দুর্নীতি ও সমাজবিরোধী কাজে ভরে গেছে।
হে অমুসলিম! তুমি কি জানো সকল মানুষ জন্ম সূত্রে মুসলিম ও বংশসূত্রে মুসলিম? আদি পিতা আদম (আঃ) ছিলেন মুসলিম ও প্রথম নবী। সম্ভবতঃ সেকারণেই সকল ধর্মে মৃত শিশু সন্তানদের দাফন করা হয়। কিন্তু পোড়ানো হয় না। তবে কেন আদি পিতার রক্তের সঙ্গে বেঈমানী করে তুমি অমুসলিম হয়েছ? এতে তোমাকে নিশ্চিতভাবে জাহান্নামের আগুনে পুড়তে হবে চিরদিন। তাই তো তোমার কথিত ধর্মনেতারা তোমার লাশকে দুনিয়ায় থাকতেই পোড়ানোর হুকুম দিয়েছে। তোমার প্রাণপ্রিয় সন্তানকে তোমার মৃত মুখে আগুন দিতে বাধ্য করেছে। অথচ তোমার প্রভু আল্লাহ নিষ্ঠুর নন। তিনি তোমাকে গোসল দিয়ে সুগন্ধি মাখিয়ে জানাযা শেষে সসম্মানে দাফন করতে বলেছেন। তুমি কি জানোনা আল্লাহর মনোনীত একমাত্র ধর্ম হ’ল ইসলাম? বাকী সবই মানুষের মনগড়া। যা ইহকাল ও পরকালে কোন কল্যাণ বয়ে আনে না। ইসলামের পথ হ’ল আল্লাহ প্রদত্ত সরল পথ। এর বাইরে সকল পথের মাথায় বসে আছে শয়তান। অতএব আল্লাহর পথ আর শয়তানের পথকে এক করে দেখ না। পরিণামে তুমি জাহান্নামী হবে। তুমি কি পারবে সেদিন জীবন্ত আগুনে জ্বলতে?
হে ধর্ম নিরপেক্ষ! ইসলাম কেবল একটি বিশ্বাসের নাম নয়। এটি একটি পথের নাম। এ পথের বিধান সমূহ না মেনে মুসলমান হওয়া যায় না। আবু জাহলরাও আল্লাহতে বিশ্বাসী ছিল। রাসূল (ছাঃ)-কে সত্য বলে জানত। কিন্তু তারা ইসলামের বিধান সমূহে ও কুরআনের আয়াত সমূহে মিথ্যারোপ করত মূলতঃ তাদের পার্থিব স্বার্থ বিবেচনায়। তুমিও যদি তাই কর, তাহলে আবু জাহলদের সাথেই তোমার হাশর হবে। অতএব সাবধান হও। মৃত্যু আসার আগেই তওবা কর।
হে মানুষ! ইহকালের চাকচিক্য তুমি দেখতে পাও। তাই তার ধোঁকায় তুমি নিজেকে হারিয়ে ফেল। কিন্তু তোমার দৃষ্টির উপারে পর্দার অন্তরালে যে চিরস্থায়ী জগতটি রয়েছে তা কি তুমি জানো? এটি হ’ল কর্মজগত, আর ওটি হ’ল কর্মফলের জগত। মনে রেখ, এ পৃথিবীতে অভ্রান্ত কোন কিতাব থাকলে তা হ’ল কুরআন। যার কোন একটি বর্ণ মিথ্যা নয়। কারণ এটি মানুষের কালাম নয়। বরং সরাসরি আল্লাহর কালাম। আল্লাহকে আমরা দেখিনা। কিন্তু তাঁর অদৃশ্য তারবার্তা আমরা পাই কুরআনে। যার প্রতিটি কলেমা সত্য ও ন্যায় দ্বারা পূর্ণ। সেই সত্য ও সুন্দরের উৎস কুরআন আমাদের খবর দিয়েছে, যারা দুনিয়াতে ঈমানদার হবে ও সৎকর্ম করবে, তারা আখেরাতে চিরকাল জান্নাতে চির শান্তিতে থাকবে। পক্ষান্তরে যারা দুনিয়াতে অবিশ্বাসী ও দুষ্কর্মী হবে, তারা আখেরাতে চিরকাল জাহান্নামের আগুনে দগ্ধীভূত হবে।
অতএব হে নাস্তিক! হে ধর্মনিরপেক্ষ! হে অমুসলিম! ফিরে এসো আল্লাহর পথে। মৃত্যুর আগেই যিদ, অহংকার ও হঠকারিতা থেকে তওবা কর। অবিশ্বাস ও কপটতার অন্ধকার থেকে বিশ্বাস ও আনুগত্যের সরল পথে ফিরে এসো। ইসলামে দ্বীনের ব্যাপারে কোন যবরদস্তি নেই। কেননা সত্য ও মিথ্যা স্পষ্ট হয়ে গেছে। ইসলামই সত্য, বাকী সবই মিথ্যা। সত্যের পথ আলোকময়, মিথ্যার পথ অন্ধকারাচ্ছন্ন। দু’টি সম্পূর্ণ পৃথক। অন্ধকার কখনো আলোকে গ্রাস করতে পারে না। বরং আলোই অন্ধকারকে দূরীভূত করে। জাহেলিয়াতের গাঢ় অমানিশা সাময়িকভাবে সমাজকে আচ্ছন্ন করতে পারে। কিন্তু সত্যের আলো জ্বলে উঠলে অন্ধকার নিমেষে পালিয়ে যায়। সত্য এসে গেছে আমাদের রব-এর পক্ষ থেকে। যার আলো বিকশিত হচ্ছে দিকে দিকে। আর জয় সর্বদা আলোরই হয়ে থাকে। অতএব সত্যকে জেনেও যদি কেউ মিথ্যাকে বেছে নেয়, তবে সে তার ইহকাল ও পরকাল দু’টিই হারালো। মিথ্যায় গড়া জীবন কোন জীবন নয়, ওটা মরণ। পক্ষান্তরে সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত জ‘ীবন হ’ল প্রকৃত জীবন। তার কাছে মানুষ পশু এমনকি পৃথিবীর সবকিছু নিরাপদ। কিন্তু মিথ্যার উপাসীদের কাছে তার নিজের জীবনও নিরাপদ নয়। নানা অপকর্মে সে নিজেকে শেষ করে ফেলে।
হে মানুষ! তোমার সবকিছু ক্রিয়া-কর্ম তোমার প্রভু অদৃশ্য থেকে দেখছেন ও রেকর্ড করছেন। তাঁকে লুকিয়ে তুমি কিছুই করতে পারো না। অতএব সাবধান হও। তাঁর ধৈর্য ও অবকাশ দানে তুমি ধোঁকা খেয়ো না। যেকোন সময় তাঁর প্রতিশোধ তোমার উপর নেমে আসবে। তখন আর তওবা করার সময় তুমি পাবে না। অতএব সাবধান হও! মনে রেখ আল্লাহ সত্য, রাসূল সত্য, কুরআন সত্য, মৃত্যু সত্য, আখেরাত সত্য, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য। অতএব এসো চিরন্তন সত্যের আলোকে জীবন গড়ি। আর এটাই হ’ল প্রকৃত জীবন দর্শন। আল্লাহ আমাদেরকে ইহজীবনে সেই আলোকিত পথ প্রদর্শন করুন- আমীন!
Post a Comment
0 comments
প্রিয় পাঠক পোস্টটি পড়ার পর যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে দয়া করে গঠনমূলক মন্তব্য করুন । আপনার ছোট্ট একটি মন্তব্য আমাকে আরও ভালো এবং উন্নত মানের পোস্ট লিখতে উৎসাহ প্রদান-করবে। আর প্রাসঙ্গিক যেকোনো প্রশ্ন-সাহায্য-জিজ্ঞাসা-অভিযোগ থাকলে। মেইল করুন mrlutfor1@gmail.com এই ঠিকানায়। আপনার ছোট্ট একটি মন্তব্য আমার নিকট অধিক মূল্যবান। আসা-করছি সাথেই থাকবেন। ধন্যবাদান্তে -লুৎফর রহমান।